সতর্ক না থাকলে রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়াতে পারে’

ডেস্ক রিপোর্ট – রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা না হলে তারা উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যদি আমরা সতর্ক দৃষ্টি না রাখি এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এখন যারা আছে তারা বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এই শিশুরা যখন অ্যাডাল্ট হবে তখন বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এই মুহূর্তে তেমন কোন আশঙ্কা নেই।’মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীদের সজাগ করার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে কিছু করতে পারবে না। বাংলাদেশে সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা তাদের নেই।’তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসএর কোনো খলিফা নাই। এটা ইরাক সিরিয়াতে থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক আইএসএ গিয়েছে, তাদের অধিকাংশ ২০১৪ সালে। এদের পাসপোর্টের মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। সিরিয়া থেকে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে গেলে এয়ারক্রাফটে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি আইডেনটিটি লাগবে। পার্শ্ববর্তী দেশের কোন দূতাবাস থেকে ট্রাভেলপাশ সংগ্রহ করতে হবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ উগ্রপন্থা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। মিডিয়া জঙ্গিবাদ নিয়ে এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করবে না, যাতে তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়তে পারে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। যেমন জিহাদ, শহীদ, মুজাহিদ এই শব্দগুলো ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ এটার একটা ধর্মীয় ইতিবাচক অর্থ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা আসলে খুনি। শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় কালচার অব ভায়োলেন্স রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। মুসলমানরা সেখানে খ্রিষ্টানদের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোনো সংঘাত ছিল না। এলটিটি কখনো কোনো ধর্মীয় গ্রুপকে টার্গেট করে হামলা চালায়নি। তারা গভর্নমেন্ট ম্যাকানিজমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ওপর হামলা করেছে, কোনো সিভিলিয়নের ওপর হামলা করেনি। শ্রীলঙ্কায় যেটি ঘটেছে সেটি সন্ত্রাসবাদ এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো তাদের কমিউনিকেশন চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছে যে, খ্রিষ্টানদের যেখানে পাওয়া যাবে কিংবা তাদের চার্চগুলোতে টার্গেট করতে হবে। এখানে খ্রিষ্টানরাই টার্গেট ছিল। এই হোটেলগুলো খুবই কাছাকাছি। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার পেছনে এখন পর্যন্ত যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে নেতা পর্যায়ের লোকও সুইসাইডাল এটাকার হিসেবে ছিল। এটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। এখানে একজন নেতা পর্যায়ের লোকও নিহত হয়েছে। তার মানে ন্যাশনাল তওহিদ জামাত এদের একটা ভূমিকাও আছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মনিরুল ইসলাম বলেন, সহিংস, উগ্রবাদ বা ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের আমদানিকারকেরা প্রথম যুগের যারা ছিল সকলেই গ্রেপ্তার হয়েছে। কেউ কেউ ফাঁসিতে ঝুলেছে। অনুষ্ঠানের আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের) মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।